বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল রহস্যময় ত্রিভুজ | Bermuda Triangle in Bengali

Bermuda Triangle in Bengali

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল পৃথিবীর রহস্যময় স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম এই অঞ্চলটি ডেভিলস ট্রায়াঙ্গেল নামেও পরিচিত, উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিম অংশে এটি অবস্থিত।

ত্রিভুজ আকৃতিতে বিস্তৃতি এই অঞ্চলে পুরানো সূত্র অনুযায়ী অনেক বাণিজ্যিক জাহাজ, অনেকগুলি বিমান এবং এমনকি আধুনিক যুদ্ধ জাহাজ পর্যন্ত রহস্যজনক পরিস্থিতিতে অদৃশ্য হয়ে গেছে বলে জানা যায়।

এই রহস্যময় স্থানটিকে নিয়ে অনেক বই, সিনেমা, ও কম্পিউটার গেমস পর্যন্তই তৈরী হয়েছে। পুরাণিক সময়ের ঘটনাকাল থেকে বর্তমান সময়ের ঘটে যাওয়া রহস্যময় সকল ঘটনা ও এর পিছনের বিজ্ঞানিকদের ব্যাখ্যা সবই আমরা এখন জানতে যাচ্ছি।

Bermuda Triangle facts in Bengali

Bermuda Triangle in Bengali – বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল কোথায় অবস্থিত?

এই রহস্যময় ত্রিভুজ এলাকাটির বিস্তৃতি হচ্ছে আমেরিকার ফ্লোরিডা সামুদ্রিক অঞ্চল থেকে পুর্তোরিকো অঞ্চল ও উপরের দিকে বারমুডা দেশ পর্যন্ত বিস্তৃত, যা ত্রিভুজ অঞ্চলের আকৃতিতে এই এরিয়ার আয়তন (৫০০,০০০) পাঁচ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত বলা হয়।

ক্রিস্টোফার কলম্বাস এর বারমুডা ত্রিভুজ অভিজ্ঞতা

বারমুডা অঞ্চলের রহস্য বিগত ৫০০ বছরের ও পুরানো মনে করা হয়, ১৪৯২ সালে বিখ্যাত নাবিক ক্রিস্টোফার কলম্বাস যখন নতুন পৃথিবীর খোঁজে এই ত্রিভুজ অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে জাহাজে ভ্রমণ করেছিলেন তিনি দেখেন এই অঞ্চলে তার দিক নির্দেশনার চৌম্বকীয় কম্পাসটি সঠিক দিক নির্দেশ করছে না।

একরাতে ক্রিস্টোফার কলম্বাস যখন জাহাজের উপরে বসে রাতের আকাশে নজর রাখছিলেন তিনি আকাশে একটি আশ্চর্য জনক আলোর ঝলকানি দেখতে পান ও সেটি সমুদ্রের জলে এসে পড়তে দেখেন।

ফ্লাইট নাইনটিন দুর্ঘটনা – Flight 19

৫ ডিসেম্বর ১৯৪৫ সালের দুপুর ২:১০ মিনিটে আমেরিকান নেভির পাঁচটি টর্পেডো বোম্বার এয়ারক্রাফট বিমান একসাথে আমেরিকার ফ্লোরিডা রাজ্য থেকে একসাথে টেকঅফ করে। এই উড়ানকে নাম দেয়া হয় Flight ১৯, এটি ছিল ৩ ঘন্টার একটি রুটিন ট্রেইনিং মিশন।

ফ্লাইটে মোট ১৪ জন ত্রু সদর্শ ছিল আর এই ফ্লাইটকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন অভিজ্ঞ পাইলট Lt. Charles Carroll Taylor তার যুদ্ধে ও নেতৃত্ব দেয়ার অভিজ্ঞতা ছিল। উড়ান শুরু হওয়ার প্রথমে আবহাওয়া সবকিছু ঠিক ছিল।

কিন্তু প্রায় ২ ঘন্টা পরে হটাৎ তাদের স্কোয়ার্ডেন লিডার রিপোর্ট করেন তার কম্পাস কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে তখন তিনি তার ব্যাকআপ কম্পাস বের করেন সেটিও কাজ করছিল না। তিনি অন্য বিমানের পাইলটদের থেকেও একই সমস্যার কথা জানতে পারেন।

আবহাওয়া তখন ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকে বিকেল ৪: ৫৬ মিনিটে টেইলারের মনে হয় তার বিমান গলফ অফ মেক্সিকোর উপরে পৌঁছে গেছে তাই তাকে ফেরার জন্য পূর্ব দিকে উড়তে হবে। তাই তিনি বাকি পাইলটদের কমান্ড দিয়েছিলেন পূর্ব দিকে ওড়ার জন্য।

কিন্তু কিছু বিমানের পাইলটদের মনে হয় তারা এখন পূর্ব দিকে রয়েছেন তাদের উপকূলে ফিরে যাওয়ার জন্য পশ্চিমে উড়ে যেতে হবে। এই নির্দেশের কিছু পরে এক পাইলটের রেডিও ভয়েস রেকর্ড করা হয় যেখানে তিনি পূর্বে উড়ে যাওয়ার হতাশা ব্যাক্ত করেন ও সব কিছু শেষ হয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেন।

সন্ধ্যা ৭: ০৪ সময়ে, টেলর তার সর্বশেষ রেডিও বার্তায় বলেন “সমস্ত প্লেন শক্তভাবে বন্ধ… ল্যান্ডফল না হওয়া পর্যন্ত আমাদের টেক অফ করতে হবে… যখন প্রথম প্লেনটি 10 ​​গ্যালনের নিচে নেমে যায়, আমরা সবাই একসাথে নেমে যাই।” এটিই ছিল টেলর ও তার দলের সাথে সর্বশেষ যোগাযোগ তারপর থেকে আজপর্যন্ত আর এই পাঁচটি বিমানের খোঁজ আজও পাওয়া যায়নি।

ফ্লাইট ১৯ হারিয়ে যাওয়ার পরে একটি রেসকিউ মেরিনা বিমান ১৩ জন সহকারীর সাথে বিমানগুলি খুঁজতে বের হয়েছিল আশ্চর্য জনক ভাবে এই বিমানটির ও আর ফিরে আসেনি। তাদের সাথে কি হয়েছে সেটাও আজ পর্যন্ত সকলের অজানা। আজও কোন বিমানের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

আধুনিক যুদ্ধজাহাজ নিখোঁজ – U. S. S. Cyclops

১৯১৮ সালে আমেরিকার সেই সময়ের সবচাইতে বড় জাহাজ U. S. S. Cyclops যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় সৈন্য বাহিনী ও কয়লা পরিবহনের জন্য ব্যবহার করা হতো। এই জাহাজটি সেই সময়ের আমেরিকার সবচাইতে দ্রুত গতির জাহাজ ছিল।

৪ মার্চ ১৯১৮ সালে আমেরিকার Baltimore থেকে এই জাহাজটি ব্রাজিলের দিকে রওয়ানা হয়। যাত্রী হিসেবে ৩০৬ জন মানুষ ছিলেন সেই সময় এই জাহাজের ভিতর, যাত্রা শুরু করার কয়েক ঘন্টা পরে জাহাজের ক্যাপ্টেন ভয়েস মেসেজে বলেও আবহাওয়া খুব ভালো সব ঠিক রয়েছে। এটাই ছিল সেই সময়ের আধুনিক জাহাজের সাথে শেষ যোগাযোগ।

এই জাহাজটিকে তার গন্তব্যে পৌঁছতে ৯ দিন সময় লাগার কথা ছিল। কিন্তু তারপর এই জাহাজের কোনো খোঁজ আর পাওয়া যায়নি, জাহাজের যাত্রীদের কি পরিণতি হয়েছিল সেটিও অজানা রয়েগেছে। এই জাহাজের ও কোনো নাম ও নিশানা খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই জাহাজে মানুষের সাথে ১১ হাজার টন ম্যাঙ্গানিজ ও নিয়ে যাচ্ছিলো।

Ellen Austin এলেন অস্টিন জাহাজের রহস্য

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের সবচাইতে ভুতুড়ে রহস্যময় ঘটনাটি ঘটেছিলো ১৮৮১ সালে সেই সময়ের বিশাল আকারে আলোচিত (Ellen Austin) এলেন অস্টিন জাহাজের সাথে। এই জাহাজটি লম্বায় ছিল প্রায় ২১০ ফিট।

এই জাহাজটি ইউরোপের লন্ডন শহর থেকে আমেরিকার নিউ ইয়র্ক যাচ্ছিল, সমুদ্র যাত্রার সময় এলেন অস্টিন জাহাজের চলার পথে একটি অচেনা জাহাজ নজরে আসে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের অঞ্চলের মধ্যে। দূরথেকে স্বাভাবিক মনে হলেও জাহাজে কোন যাত্রী বা নাবিক ছিলোনা।

এলেন অস্টিন জাহাজের ক্যাপ্টেন ওই অপরিচিত জাহাজের সাথে কি হয়েছে সেটা জানার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তারা জাহাজের খুব নিকটে গিয়ে অপেক্ষা করেন কারণ সেই সময় সমুদ্রে জলদস্যুদের দ্বারা জাহাজ লুটের ঘটনা ছিল অধিক। কিন্তু দুই দিন পর্যন্ত জাহাজের মধ্যে কোন মানুষের নিশানা না পাওয়ায় তারা জাহাজে উঠে দেখেন সেখানকার সকল কিছু সঠিক জায়গায় রাখা রয়েছে শুধু মানুষের উপস্থিতি নেই।

বলাহয় সেই জাহাজটি সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যালেন অস্টিন জাহাজের ক্যাপ্টেন তার জাহাজের কিছু নাবিককে সেই জাহাজে পাঠান। এলেন অস্টিন জাহাজের সাথে ভুতুড়ে জাহাজটি দুই দিন চলার পরে একটি সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে পরে সেটি দূরে হারিয়ে যায়। ক্যাপ্টেন সেটি আবার খুঁজে পেলে দেখেন আগের মতোই সেই জাহাজের নাবিকরা কেউ জাহাজে নেই।

কাহিনী অনুযায়ী এলেন অস্টিন জাহাজের ক্যাপ্টেন দ্বিতীয়বার আবার সেই জাহাজে লোক পাঠিয়ে সেই জাহাজটি সঙ্গে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন এবং কিছুদিন পরে জাহাজটি আবারো ঝড়ের কবলে পরে অদৃশ হয়ে যায়। আবার আর সেই জাহাজের কোন খোঁজ পাওয়া যায়না।

এই ঘটনার পরে জাহাজটি নিউ ইয়র্ক পৌঁছুলে ঘটনাটির চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পরে। আর এলেন অস্টিন জাহাজের মালিক এই ঘটনায় বিচলিত হয়ে জাহাজটি বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এলেন অস্টিন জাহাজটি একটি ফ্রান্সের সংস্থা কিনে নেয় এবং নাম পরিবর্তন করে রাখে মেটা।

রহস্যের কাল্পনিক বিশ্বাস – Bermuda Triangle in Bengali

বারমুডা অঞ্চলের কিছু ঘটনা এতটাই পুরানো যে তার সত্যতা নিয়ে নতুন করে বেশি কিছু তথ্য পাওয়া সম্ভব নয়। তবে অনেকের বিশ্বাস এখানে ভিনগ্রহের প্রাণীর অস্তিত্ব রয়েছে তারাই মানুষ সহ জাহাজ কিংবা বিমান গুলি নিয়ে গাছে তাদের সাথে। কেউ মনে করে এই অঞ্চলের সমুদ্রের নিচে এমন সামুদ্রিক মনস্টার প্রাণী থাকতে পারে যে এইসব জাহাজকে সমুদ্রের নিচে টেনে নেয়। কেউ মনেকরে এই অঞ্চলের সমুদ্রের জলে ও বাতাসের ঘূর্ণির কারণে জাহাজ ও বিমানকে সমুদ্র তলে টেনে নেয়।

কিছু বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব – Bermuda Triangle in Bengali

১. পৃথিবীর যে নর্থপেল আর ম্যাগনেটিক নর্থপোল দুটি ভিন্ন পয়েন্ট। তাই আপনি যখন কাম্পাসে নর্থপলের দিকে দেখেন সেটি ম্যাগনেটিক নর্থপলের দিকে দিক নির্দেশ করে।

২. স্যাটেলাইট মানচিত্রে দেখাযায় এই সামুদ্রিক অঞ্চলের বিভিন্ন অংশের গভীরতা কোথাও কোথাও খুবই কম। অগভীর জলের নিচে থাকা ছোট পাহাড়ের সাথে জাহাজের দুর্ঘটনা একটি পরিচিত ঘটনা।

৩. হ্যারিকেনের প্রভাব, পৃথিবীর মানচিত্রের সবচাইতে অধিক হ্যারিকেন প্রধান অঞ্চলের মধ্যে এই অঞ্চলটি অন্যতম একটি হ্যারিকেন প্রধান অঞ্চল। তাই হ্যারিকেন এর প্রভাবে এখানে বিভিন্নসময় প্রচুর জাহাজের ক্ষয়ক্ষতি হওয়া স্বাভাবিক।

৪. চতুর্থ তত্বটি মিথেন হাইড্রেড নিয়ে জলের মধ্যে লবণের পরিমান বেড়ে গেলে সেটি যেমন অধিক ভারী বস্তুকে ভাসিয়ে রাখতে তেমনি মিথেন হাইড্রেড এর পরিমান জলে বেড়ে গেলে জলের বস্তুকে ভাসিয়ে রাখা ক্ষমতা থাকেনা এই পরিস্থিতিতে কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটি জাহাজ জলের তলায় ডুবে যেতে পারে। তবে বলা হয় বিগত কয়েক হাজার বছরে এই অঞ্চলে মিথেন হাইড্রেড গ্যাসের বেশি মজুদ এর অস্তিত্ব প্রমান হয়নি।

৫. মানুষের ভুলকেও বৈজ্ঞানিকরা সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখেন কারণ এত বিশাল অঞ্চল নিয়ে বিস্তৃত সমুদ্রের প্রচুর পরিমানে জাহাজের চলাচল হওয়ার কারণে দুর্ঘটনার সংখ্যাও বেশি হবে ভাবাই যায়।

Read More