Salil Chowdhury সংগীতস্রষ্টা সলিল চৌধুরী একজন ভারতীয় বিখ্যাত সংগীত পরিচালক, সুরকার, গীতিকার, ও লেখক ছিলেন, তিনি জন্মসূত্রে একজন ভারতীয় বাঙালি ছিলেন।
শ্রদ্ধেয় সলিল চৌধুরী তার সংগীতের মাধ্যমে সমস্ত ভারতীয় সংগীতপ্রেমী মানুষের মনে সফলতার রূপকথা হয়ে রয়েছেন তার সৃষ্টি এক একটি বিখ্যাত হৃদয়স্পর্শী সংগীতের দ্বারা।

কৃতিমান এই বাঙালি সংগীত পরিচালক শুধু বাংলা চলচিত্রে নয় তিনি সমান সাফল্য, পরিচিতি ও খ্যাতি অর্জন করেছেন হিন্দি সিনেমার গান ও মালায়লাম সিনেমার সংগীতে।
ভারতীয় সংগীত জগতের যত বড় বড় সুরকার ও সংগীতজ্ঞ ভারতীয় সংগীতকে সমৃদ্ধ ও বিশ্ব সমাজে সংস্কৃতির সাথে তুলে ধরেছেন তাদের আকাশে সলিল চৌধুরী একটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম।
Salil Chowdhury Biography in Bengali – জীবনী
১৯ নভেম্বর ১৯২৫ সালে তার জন্ম হয় ভারতের পশ্চিম বঙ্গ রাজ্যের, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার রাজপুর, সোনারপুরে, তিনি এক বাঙালি কায়াস্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন, পরিবারের আট ভাইবোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয় সন্তান।
তার বাবা পেশায় ছিলেন একজন ডাক্তার নাম জ্ঞানেন্দ্রময় চৌধুরী, কর্মসূত্রে তিনি আসাম রাজ্যের চা বাগানের একজন অভিজ্ঞ ডাক্তার হিসেবে নিয়জিত ছিলেন। তার কর্মস্থল ছিল আসামের লতাবাড়ি চা বাগান।
সলিল চৌধুরীর সংগীতে হাতেখড়ি হয় তার বাবা জ্ঞানেন্দ্রময় চৌধুরীর কাছে ছোট থেকে বাবার কাছে তিনি নিয়মিত সংগীত শিখতেন আর তার জ্যাঠটাতো দাদা নিখিল চৌধুরীর কাছেও সংগীতের তালিম নেন।
শৈশব থেকেই গানের জগতের সাথে সম্প্রিক্ত সলিল চৌধুরীর ছোটবেলার বেশিরভাগ সময় কেটেছে আসামে তার বাবার কর্মসূত্রে, সবুজ প্রাণবন্ত নিবিড় চা বাগানের মাঝে তিনি ছুটে বেরিয়েছেন।
শিক্ষা জীবন
তিনি তার শিক্ষা জীবন শুরু করেন তার মামার বাড়ি থেকে, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার কোদালিয়া গ্রামে (বর্তমান নাম সুভাষ গ্রাম) তার মামার বাড়ি ছিল।
তিনি হরিনাভি বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন এনং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করে তিনি বঙ্গবাসী কলেজ থেকে সাফল্যের সাথে বিএ পাশ করেন।
সলিল চৌধুরীর সংগীত জীবন
যৌবন বয়স থেকেই গান লেখা সলিল চৌধুরী ছিনেমা জগতে সুরকার হিসেবে আত্ম প্রকাশ করার পরে একের পর এক সাফল্য অর্জন করেছেন, তার প্রথম বাংলা চলচ্চিত্র মুক্তিপায় ১৯৪৯ সালে।
তার লেখা ও সুর করা গান সেই সময়ের কলকাতার সকাল প্রতিষ্ঠিত বাঙালি গায়ক গান গেয়েছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন শ্যামল মিত্র, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং হেমন্ত মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।
পুরস্কার এবং স্বীকৃতি
1953 – দো বিঘা জমিন
সলিল চৌধুরী রচিত বাংলা “রিকশাওয়ালা” গল্পের উপর ভিত্তি করে বিমল রায় পরিচালিত একটি হিন্দি চলচ্চিত্র।
1ম ফিল্মফেয়ার পুরস্কার (1954)
বিজয়ী – শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র; বিজয়ী – সেরা পরিচালক – বিমল রায়।
1ম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
7 তম কান চলচ্চিত্র উৎসব (1954)
বিজয়ী – প্রিক্স ইন্টারন্যাশনাল (আন্তর্জাতিক পুরস্কার) মনোনীত – গ্র্যান্ড প্রাইজ (সেরা চলচ্চিত্র)
কার্লোভি ভ্যারি ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, বিজয়ী – সামাজিক অগ্রগতির জন্য পুরস্কার।
1965 – চেমেইন
রামু করিয়াত পরিচালিত একটি মালায়ালাম চলচ্চিত্র, বিখ্যাত লেখক থাকাজি শিবশঙ্কর পিল্লাইয়ের লেখা একই নামের একটি উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে, যেখানে সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন সলিল চৌধুরী।
1965 সালে রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদক প্রাপক।
1958 – মধুমতি
অন্যান্য আটটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের সাথে ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালকের পুরস্কার প্রাপ্ত মধুমতি হিন্দিতে শ্রেষ্ঠ ফিচার ফিল্মের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছে।
উত্তরপ্রদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সংঘ পুরস্কার 1966 সালে তার একমাত্র হিন্দি পরিচালকের ছবি ‘পিঞ্জরে কে পাঁচি’-এর জন্য।
বেঙ্গল ফিল্মস জার্নালিস্ট অ্যাওয়ার্ড, কলকাতা 1973 সালে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার থেকে 1985 সালে আলাউদ্দিন স্মৃতি পুরস্কার।
1988 – সলিল চৌধুরী সঙ্গীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার পান।
1990 সালে মহারাষ্ট্র গৌরব পুরস্কার।
মরণোত্তর তিনি 2012 সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মুক্তিযুধ মৈত্রেয়ী সম্মান পুরস্কারে ভূষিত হন।
কবি, নাট্যকার, ছোটগল্পকার, তিনি মীনা কুমারী, বলরাজ সাহানি এবং মেহমুদ বি অভিনীত পিঞ্জরে কে পাঁচি চলচ্চিত্রটিও পরিচালনা করেছিলেন।
মৃত্যু
বরেণ্য ভারতীয় বাঙালি সলিল চৌধুরীর কর্মময় জীবন অবসান ঘটে ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯৫ সালে কলকাতা, ভারতে। মৃত্যু কালে তার বয়স হয়েছিল (৬৯) বছর।
Read More